বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:পশ্চিমবাংলায় করোনা সংক্রমণে লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। সরকারি হিসেবে সংক্রমিতের সংখ্যা তেমন কমানো যাচ্ছে না। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। যদিও সুস্থ হওয়ার সংখ্যাও বেশ বাড়ছে। কিন্তু সংক্রমিতের সংখ্যা না কমায় রাজ্য সরকার ও প্রশাসনের কপালে ফুটে উঠছিল চিন্তার বলিরেখা। লকডাউন কড়া হতে পারে বলে বারবার ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছিল কয়েকদিন ধরেই। শেষ পর্যন্ত সেই পথেই হাঁটল রাজ্য সরকার। ফের পূর্ণ লকডাউন হচ্ছেন বাংলায়। তবে সব জায়গায় নয়, কনটেনমেন্ট জোনের সবগুলিতেই এবার হচ্ছে পূর্ণ লকডাউন।
এই লকডাউন শুরু হচ্ছে বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটায়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নবান্ন থেকে রাজ্য সরকারের পক্ষে স্বরাষ্ট্র সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই লকডাউনের কথা ঘোষণা করেন। এই লকডাউনে কনটেনমেন্ট জোনে থাকা কোনও দোকানপাট খুলবে না। খুলবে না কোনও সরকারি বা বেসরকারি অফিস। শুধু অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দোকান বা কাজের অফিস খোলা থাকবে। এই জোনের বাসিন্দারা যেতে পারবেন না তাঁদের কর্মক্ষেত্রেও। মানে তাঁরা কেউই নিজের ব্যবসা থাকলেও সেই কেন্দ্রে যেতে পারবেন না। যদি সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন কেউ, তা হলেও সেই প্রতিষ্ঠানে তাঁরা যেতে পারবেন না। এই জোনে কোনও গাড়ি চলাচল করবে না। সমস্ত ধরনের কারখানা বা ব্যবসাও বন্ধ থাকবে। এই জোনের কোনও জায়গায় কোনও জমায়েত করা যাবে না। জোনের বাসিন্দাদের প্রত্যেকের দিকে কড়া নজরদারি চালাবে পুলিশ ও প্রশাসন।
একই সঙ্গে স্বরাষ্ট্র সচিব এ কথাও জানিয়ে দিয়েছেন, এবার থেকে করোনা সংক্রমণের নিরিখে রাজ্যের জোনগুলিকে আর বিভিন্ন ভাগে (রেড, অতি রেড, অরেঞ্জ, গ্রিন জোন ইত্যাদি) ভাগ করা হবে না। এখন থেকে শুধু কনটেনমেন্ট জোনই থাকবে। সেই জোনেই হবে পূর্ণ লকডাউন। এই জোনের কোনও বাসিন্দাকে কিছুতেই লকডাউনের নিয়ম ভাঙতে দেওয়া হবে না। পাশাপাশি এই জোনের বাসিন্দাদের বাড়ি বাড়ি যাতে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া যায়, সেই ব্যাপারে সরকার ও প্রশাসনের তরফে ভাবনাচিন্তা চলছে। এই লকডাউনের আওতায় পড়ছে কলকাতার কনটেনমেন্ট জোনগুলিও। উল্লেখ্য, কলকাতায়ও এখন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ। সেইজন্য কলকাতায় কলকাতার কনটেনমেন্ট জোনের সংখ্যাও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই খবর লেখার সময় পর্যন্ত মহানগরীতে কনটেনমেন্ট জোনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৩টি এলাকা। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, আনলক ১ এবং আনলক ২ পর্বে কলকাতায় গরিব এলাকাগুলির তুলনায় করোনা সংক্রমণ বেশি হয়েছে অভিজাত আবাসন ও এলাকাগুলিতে। বিষয়টিকে তাই হালকা ভাবে নিতে রাজি নয় প্রশাসন।
এদিকে, এদিন রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত স্বাস্থ্য বুলেটিন থেকে জানা গিয়েছে, শেষ ২৪ ঘণ্টায় গোটা রাজ্যে করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ৮৫০ জন। সোমবার এই সংখ্যাটা ছিল ৮৬১ জন। এর অর্থ, সংক্রমণ কমলেও নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। এদিন সংক্রমিতদের মধ্যে কলকাতার রয়েছেন ২৯১ জন। এই সংখ্যাটা সোমবার ছিল ২৮১ জন। তার মানে এদিন কলকাতায় সংক্রমিত বেড়েছেন ১০ জন। ফলে গোটা রাজ্যে মোট সংক্রমিতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৮৩৭ জন। কলকাতায় মোট সংক্রমিত হয়েছেন ৭ হাজার ৬৮০ জন। এই মুহূর্তে রাজ্যে ৭ হাজার ২৪৩ জনের শরীরে কোভিড–১৯ ভাইরাস সক্রিয় রয়েছে। এদিন শেষ ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে মৃতের সংখ্যাও রেকর্ড করেছে। এদিন সরকারি হিসেবেই প্রাণ হারিয়েছেন ২৫ জন। সোমবার মৃত্যু হয়েছিল ২২ জনের। যে ২৫ জনের আজ মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ১০ জনই কলকাতার। এদিন পর্যন্ত রাজ্যে করোনা সংক্রমিত হয়ে মৃত্যুর মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮০৪ জন।